এক গ্রামে এক বৃদ্ধ বাস করত। সংসারে সে একবার একা। খুব কষ্ট করে তার দিন চলত। বনের কাঠ কেটে, বাজারে বিক্রি করে, সামান্য দু -চার পয়সা যা পেত, তাতে তার কোনোরকমে দিন চলত। এত দুঃখ কষ্ট বৃদ্ধের আর সহ্য হতো না।সে মাঝে মাঝেই নিজের ভাগ্যকে গালি দিতো। একদিন গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা রোদে বৃদ্ধ কাঠের বোঝা নিয়ে বন থেকে ফিরছিলো। রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে তার শরীর উত্তপ্ত হয়ে উঠল যে, তার পায়ে ফোস্কা পড়ে গেল।
বেচারা বৃদ্ধ কি আর করে। শেষে ক্লান্ত হয়ে, মাথার বোঝাটা নামিয়ে রেখে, পথের ধারে গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিতে লাগল। তার মনে ভীষণ রাগ আর দুঃখ হল।বাঁচে থাকার জন্য, এই বুড়ো বয়সেও এত কষ্ট করতে হচ্ছে। সে বসে বসে নিজের দুর্ভাগ্যকে গালি দিতে লাগল। শেষে বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলতে লাগল - সংসারে রোজ এত লোকের মরণ হচ্ছে ; তবু তার মরণ হচ্ছে না কেন? ব্যাটা যম! তুমি কি অন্ধ হয়ে গেছো। এত মানুষেকে রোজ চোখে দেখো, তবু আমায় কিছুতেই চোখে দেখো না। এত কষ্ট আমি আর সইতে পারছি না। হে যম! এবার আমার ডাক শুনে দয়া করে আমায় নিয়ে যাও।
বৃবৃদ্ধার মুখের কথা শেষে হতে না হতেই, ভীষণ মূর্তি ধারণ করে যমরাজ তার সামনে হাজির হলেন। যমকে দেখে বৃদ্ধ ভয় পেয়ের বলল- একি! কে আপনি? এখানে এসেছেন কেন? বৃদ্ধার কথা শুনে যমরাজ বললেন - আমি মৃত্যুর দেবতা যম! তোমার ডাক শুনেই আমি এসেছি। এখন বলো, কেন আমার ডেকেছ? যমের কথা শুনে বৃদ্ধ চমকে উঠলেন। সত্যিই তো। সে এতক্ষন যমকেই ডাকছিলো। এখন কি করবে সে। যম তাকে নিতে এসেছে যে। বৃদ্ধ একটু ভেবে বলল, পভু! আপনাকে আর কি বলবো। অধমের ডাক শুনে দয়া করে যখন এসেই পড়েছেন, তখন একটু কষ্ট করে বোঝাটা আমার মাথায় তুলে দিন। আমায় এবার বাজারে যেতে হবে। বৃদ্ধার কথা শুনে যম একটু হাসলেন। তার পর অদৃশ হয়ে গেলেন।
নীতিকথা :- দুঃখ কষ্টে মানুষ মৃত্যুকে যতই কামনা করুক, আসলে সে মরতে চায় না।
Comments
Post a Comment